আমি বাঙালি

বাংলা আমার চেতনা (ফেব্রুয়ারী ২০১৬)

শ্রী সঞ্জয়---
  • 0
  • ৬৭
‘চিনতে আমায় ভুল করোনা তোমরা ওহে আবার’,
আমরা হলাম দেশের সেরা, “আমরা সেরা সবার” ।

“ সেই আদি খেকেই আমরা সবাই- পৃথিবীর এক কোণ থেকে আর এক কোণেতে, এক দুর্দান্ত রকমের বাঙালি হিসাবে পরিচিত হয়ে আছি । জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সাথে আমরা, এই বাঙালিরা এক । আমরা একে অপর কে ছেড়েও একে অপরের সাথে এক অভিন্ন সম্পর্ক গড়ে তুলি নিজের বাসস্থানের মত । তাই, আমরা এক অন্যন্য বাঙালি জাতি । আমরা, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছি পৃথিবীর একোণ থেকে ওকোণেতে কেউ বিজ্ঞানী হয়ে, কেউবা ইঞ্জিনিয়ারিং রূপে, কেউবা ক্রিকেটার, ফুটবলার, গায়ক-নায়ক আবার কেউ লেখক-কবি রূপে । তাই আমরা, মানে বাঙালিরা খুবই গর্বিত, এক, কৌশলগত দিক থেকে এবং দুই, কর্মগত দিক থেকে । ‘আমরা গর্বিত এই কারণেই যে-, আমরা কোনো কিছুতেই কোনো রকম গর্ব করি না’ , তাই আমরা গর্বির এবং সবার শীর্ষে ।”- ‘ধন্যবাদ সবাইকে’ ।

(হাতের তালি দিতে দিতে বিজ্ঞান বিভাগের সহ-শিক্ষক দেবাশিষ পণ্ডা মহাশয় মাইকের পাশে এসে-,) এই মাত্র আমাদের সংগঠিত “বাঙালিয়ানা” মঞ্চে ছোট্ট একটি বক্তব্য দিয়ে গেলেন আমাদের স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী সুজাতা কুমারী ।এই ছোট্ট মেয়েটি কি- সুন্দরই না কথা বলে গেল । আমরা অর্থাত বাঙালিরা, যেমন বাঙালি রূপে চারিপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছি, তেমন সাথে সাথে বিভিন্ন রূপেতেই পরিচিতি হয়েও আছি । বিশেষ করে এক মহান থেকে মহানতম ব্যক্তির নাম যদি নি তবে ভুল হবে না আমার । তিনি হলেন আমাদের সবার সেরা, এমন কি বিশ্বের সেরা- ‘বিশ্ব কবি রবীন্দ্র নাখ ঠাকুর’। ইনি এত জ্ঞাণেই ভরপুর ছিলেন যে আমরা ভাবতেও পারিনা । তার কাব্যজ্ঞাণ সাহিত্যের ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদ । আমরা জানি রবি ঠাকুর এত জ্ঞানের অধিকারি হওয়ার সত্ত্বেও তার মধ্যে এতটুকু গর্বের ছাপ পরিলক্ষিত হয়নি । তাই প্রাক্তন ছাত্রী সুজাতা কুমারী মতে মত মিলিয়ে আমিও বলব, “আমরা গর্বিত যে-, আমরা গর্ব করি না কোনো কিছুতেই, তাই আমরা গর্বিত” ।

আমি তখন শ্রোতা । সামনের বিছানো আসনে বসে বসে খুব মন দিয়ে শুনলাম, স্যারের কথা এবং ওই মেয়েটির কথা । আমি নিজে নিজেই যেন কিছু একটা ফিলিং করলাম এই ভেবে যে-, ‘আমি এক বাঙালি’ । বুকটা যেন দুই তিন ফুট বেড়েই গেল, এমন অবস্থা । আমি যে এক বাঙালি ঠিক তখনই বুঝতে পারলাম । তবে, বাঙালি মানে কি হয় তা আমি জানি না । জানার আগ্রহও ছিল না আজ অবদি । কিন্তু, এখন বুঝছি । জানার আগ্রহটাও খুব জাগছে । তাই, যেমন করেই হোক আমাকে জানতে হবে ।

পরের দিন ভোরের বেলা সাত’টার নাগাদ আমি সাইকেল নিয়ে একটু বাজারের দিকেই যাচ্ছিলাম । যেতে যেতেই খানিকটা দূরেই দেখি ওই মেয়েটাকে এবং ওর হাতে ছিল একটি স্বামীজীর পকেট বই । তাকে দেখতে পেয়েই ক্ষুধাটা যেন আরো তীব্রতর হয়ে উঠল । তাই আমি আর কালবিলম্ব না করে এই বলে ডাক দিলাম তাকে-,

“ এই যে শুনছেন, সুজাতা কুমারী , একটু দাঁড়াবেন প্লিজ” ।

এই না শুনে সুজাতা পিছু ফিরতেই না ফিরতে আমি হাজির হলাম একেবারে ওর সামনেই । প্রত্যুত্তরে-,

“ হ্যাঁ, বলুন । কি চান ? আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না ” ।

ঠিকই বলেছেন । আমাকে আপনি চিনতে পারবেন না । বলতে পারেন- আমি আপনার এক শ্রোতা । কালকের ওই ছোট্ট ভাষণ’টাতেই, আমি খুব খুব প্রভাবিত হয়েছি । আমি হলেম ওই দেউলিয়া গ্রামের মাইতি পাড়ার ‘বিলে’ । নাম রামকৃষ্ণ অধিকারি ।

বেশ বেশ, ঠিক আছে ! এবার বলুন তো আর কিসের জন্য পথ থামালেন । শুধু কি এই পরিচয় দিতে নাকি । ব্যাপারটা আগে বাড়ান তাড়াতাড়ি । আমার তাড়া আছে টিউশন পড়াতে যেতে হবে ।

বিস্তার তো অনেক । আর অল্প সময়ে তো মনে হয় ব্যাপারটা এপার ওপার হবে না আমার । তাই আপনি একটু, প্লিজ, যদি বিকেল চার’টার নাগাদ আমকে সময় দেন তবে বলতাম সব । পারবেন কি ! এই গাধা’টাকে একবার ঘোড়া বানাতে ।

এই না শুনে সুজাতা হেসে উঠে, এবং বলতে লাগে, আচ্ছা ঠিক আছে । তবে বলুন কোথায় আসতে হবে । এই প্রথম বারই দেখলাম আপনাকে যে আমার এক দৃঢ় শ্রোতা হিসাবে । আগে তো বলতো আমায় পাড়ার লোকে যাচ্ছাতাই নাকি ভাষণ দি । আচ্ছা বলুন কোথায় আসবো আমি ?

‘দেউলিয়ার পার্কে’ । “-ওই নীম গাছটার পাশে । বিকেল চারটা থেকে সাড়ে চারটার মধ্যে । আর হ্যাঁ হাতে যে বইটা আছে তাকেও সাথে করে নিয়ে আসবেন” । এই না শুনে খুব দ্রুত গতিতে রওনা দিল গাঁয়ের দিকে । বই সাথে করে আনার উদ্দেশ্যটা হল, তাতে লেখা ছিল “স্বামীজীর আহ্বান” । ভাবলাম হয়তো ওটাতেই আমার চাওয়া-পাওয়া সব ।

বিকেলের ঘুমন্ত বিছানা থেকে যখন সোজা ঘড়ি’টার দিকে তাকাই তখন চার’টা দশ । তড়বড়িয়ে উঠি সোজা মুখ-টুখ ধুয়ে সাইকেলটা নিয়ে খুবই দ্রুত বেরিয়ে এলাম । গিয়েই দেখি সুজাতা ওই দেওয়া ঠিকানায় বসেই রয়েছে ।

‘সরি’, সুজাতা । আপনাকে অনেক্ষন বসিয়ে রাখলাম । ওর থেকে ঠিক দুই তিন হাত দূরে মেলা ঘাসের উপর বসেই তাকে বললাম; “ সেই বইটা ! আনেননি নাকি”! কেন?

আচ্ছা বলুন এবার ওই বেলা কি বলতে চাই ছিলেন !

না না তেমন কিছু নয় । তবে জানেন, আপনার ওই ক্ষুদ্র বক্তব্যটাই আমার মধ্যে হাজারো প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে । পরিনত করেছে আমার লুপ্ত মনটাকে সুপ্ত । আচ্ছা সুজাতা ‘বাঙালি’ মানেটা কি ? যারা বাংলা ভাষায় কথা বলে ! নাকি-,

এক আসলি্ বাঙালির কাছে এমনতর প্রশ্ন করাটা মানে এক গাধার কাছে মূল্যহীন লাগবেই । প্রশ্নটা শুনার পর, সুজাতার চোখ-মুখ যেন আনন্দে উল্লাসিত হয়ে উঠল এবং বলল;-

“ বাঙালি মানে শুধু বাংলা ভাষায় কথায় বললে হয় না । ভাষা বলার সাথে সাথে ভালোবাসাটাও খুব ভালো দরকার । এই মনে করুন যদি কোনো বাঙালি পথে যেতে যেতে, এক অসহায় দরিদ্র দেখেই যদি তার মনটি ব্যথায় ব্যথাতুর হয়ে ওঠে তবেই ওই আসল বাঙালি । কিংবা-, শুধু নিজের দেশকেই ভালোবাসা ও সন্মান করা মানেই বাঙালি বোঝায় না । বোঝায়, সাথে সাথে অপর দেশকে সমতুল্য সন্মান এবং ভালোবাসা । শুধু তাই নয়, নিজের মানুষের সাথে সাথেও অপরের সাথে এক অভিন্ন সম্পর্ক গড়ে তোলটাই বাঙালি বোঝায় । আর বাঙালিরা যদি কোনো কিছুতেই গর্ব না করে তাহলে বোঝায় আসল ও সত বাঙালি এবং গর্বিত বাঙালি । এক কথায়, ‘বাঙালি মানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই নিজের মতো সমান চোখে দেখা’ । জানলে তো এবার বাঙালি মানেটা কি ! আর ওরাই আসল বাঙালি যারা অপরকে এক অন্যন্য ভালোবাসার বাঁধনে বাঁধতে জানে । বুঝলে মশাই !”

হ্যাঁ বুঝলাম , সবই বুঝলাম । তোমার মত যদি সব বাঙালি হতো, তবে আজ আমার মতো সব গাধারই বাঙালি হিসাবে পরিচয় দিতে কক্ষনো ভয় করতো না । আজ আমি খুব খুব গর্বিত কারণ আমি এক বাঙালি
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

২৬ অক্টোবর - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪